Unknown

image 98 17483 300x207 মহাবিশ্ব পর্ব ০৬: বুধঃ সূর্যের সবচেয়ে আপন গ্রহ






সূর্যের সবচে কাছের এবং সৌরজগতের ২য় ক্ষুদ্রতম গ্রহ বুধ (Mercury)। সুর্যের খুব কাছাকাছি হওয়ায় এবং আকৃতিতে ছোট হওয়ায় পৃথিবী থেকে খালি চোখে দেখা কঠিন। তবে বছরের নির্দিষ্ট কিছু সময়ে পশ্চিমাকাশে সুর্যাস্তের পর এবং পূর্বাকাশে সুর্যাদয়ের ঠিক আগে একবারে দিগন্ত বরাবর বুধকে খালি চোখে দেখা যায়। বুধের ব্যাস প্রায় ৪,৮৮০ কিমি (পৃথিবীর চেয়ে ৪০% ছোট এবং আমাদের চাঁদের চেয়ে ৪০% বড়)। এর ভর ৩.৩০ এর পর ২৩টি শুন্য বসালে যা হবে তত কিলোগ্রাম।










01 মহাবিশ্ব পর্ব ০৬: বুধঃ সূর্যের সবচেয়ে আপন গ্রহ
বুধ এবং পৃথিবীর আকারের তুলনা।


নামকরণঃ

গ্রহ-নক্ষত্রের নামকরনের ক্ষেত্রে প্রায় সব ক্ষেত্রেই জ্যোতির্বিদরা পৌরানিক কাহিনীর কাছে হাত পেতেছেন। আর বুধের নামকরন করা হয়েছে রোমান পৌরানিক দেবতা মারকারির (Mercury) নামে; যিনি ছিলেন বানিজ্যের দেবতা। মারকারি দেবতা বানিজ্যর জন্য সর্বদা ছোটাছুটি করতেন। বুধ গ্রহ আকাশে খুব দ্রুত পরিভ্রমণ করে–ধারনা করা হয় এ কারনেই এ গ্রহের নাম বুধ (Mercury) রাখা হয়েছে।










02 মহাবিশ্ব পর্ব ০৬: বুধঃ সূর্যের সবচেয়ে আপন গ্রহ
সুর্যের সামনে বুধ

বুধ অভিযাত্রাঃ

এ পর্যন্ত দুটি মহাকাশযান বুধ অভিযানে যাত্রা করেছে– মেরিনার-১০ (Mariner-10) এবং মেসেন্জার (MESSENGER)। মেরিনার-১০ ১৯৭৪ এবং ১৯৭৫ সালের মধ্যে ৩ বার বুধের পাশ দিয়ে উড়ে গেছে। এ সময় মেরিনার-১০ বুধ গ্রহের ৪৫% ছবি তুলতে সক্ষম হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত মেরিনার-১০ সূর্যের বেশি কাছাকাছি চলে যায় এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। ২০০৪ সালে নাসা মেসেন্জার উৎক্ষেপন করে বুধের উদ্দেশ্যে যা বুধের চারপাশে কয়েকবার ঘুরপাক খাওয়ার পর ২০১১ সালে এর কক্ষপথে কৃত্তিম উপগ্রহ হিসেবে ঘুরতে থাকবে। ২০০৮ সালে প্রথমবার বুধের পাশ দিয়ে উড়ে যাবার সময় মেসেন্জার কিছু হাই কোয়ালিটি ছবি পাঠিয়েছে যা আগে মেরিনার-১০ পাঠাতে পারেনি।










03 মহাবিশ্ব পর্ব ০৬: বুধঃ সূর্যের সবচেয়ে আপন গ্রহ
বুধ প্রদক্ষিনরত মেসেন্জার (MESSENGER)

কক্ষপথঃ

বুধ ডিম্বাকৃতি পথে সুর্যকে প্রদক্ষিণ করে। প্রদক্ষিণকালে বুধ-সুর্যের মধ্যকার সবচে কম দুরত্ব ৪৬ মিলিয়ন কিলোমিটার এবং সবচেয়ে বেশি দুরত্ব ৭০ মিলিয়ন কিলোমিটার। গড় দূরত্ব প্রায় ৫৯ মিলিয়ন কিলোমিটার। সৌরজগতের গ্রহ গুলোর মধ্যে বুধ সবচে দ্রুতগামী এবং অল্প সময়ে সুর্যকে প্রদক্ষিন করে (৮৮ দিনে)। নিজ অক্ষের উপর বুধের গতি প্রতি সেকেন্ডে ৪৮ কিমি।

বুধের দিন-রাতঃ

নিজ অক্ষের উপর বুধের এক বার ঘুরতে প্রায় ৫৯ দিন সময় লাগে। শুক্র গ্রহর পর সৌর জগতের গ্রহগুলোর ঘুর্ণণের ক্ষেত্রে এ সময় সর্বোচ্চ (অর্থ্যাৎ নিজ অক্ষের উপর একবার ঘুরতে অন্যান্য গ্রহের তুলনায় বুধ ২য় সবোর্চ্চ সময় নেয়)। নিজ অক্ষের উপর ধীর গতির ঘুর্ণণ আর সুর্যের চারপাশে দ্রুতগতির প্রদক্ষিণ–এ দুয়ের কারনে বুধের দিনের দৈর্ঘ্য অনেক বেশি। বুধের এক দিন= পৃথিবীর ১৭৬ দিন!

গঠনঃ

বুধের গঠন অনেকটা আমাদের চাঁদের মত। তবে এর ভু-পৃষ্ঠ চাঁদের চেয়ে অনেক প্রাচীন এবং অসংখ্য আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ সমৃদ্ধ। জ্বালামুখগুলোর ব্যাস একশ থেকে হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এবং ৩ কিলোমিটার পর্যন্ত উঁচু। পৃথিবীর পর সৌরজগতের সর্বোচ্চ ঘনত্বের গ্রহ হল বুধ। বুধের অভ্যন্তর ভাগের বেশির ভাগই হল তরল লোহা। বিজ্ঞানীদের ধারনা কেন্দ্র থেকে ১৮০০-১৯০০ কিমি ব্যাসার্ধ পর্যন্ত লোহার স্তর বিদ্যমান। এর বাইরের দিকে আছে সিলিকার স্তর। এর বিস্তৃতি ৫০০-৬০০ কিমি।

তবে বুধের ভু-পৃষ্ঠের অন্যতম বৈশিষ্ট হল “ক্যালরি বেসিন”। বুধের প্রায় পুরো ভু-পৃষ্ঠই এবড়ো-থেবড়ো, শুধুমাত্র ক্যালরি বেসিন ছাড়া। এই সমতল বেসিনের ব্যাসার্ধ প্রায় ১৩০০ কিলোমিটার। ধারনা করা হয় সৌরজগতের জন্মলগ্নের সময়ে সৃষ্ট এই বেসিন কোন এক বড় ধরনের মহাজাগতিক সংঘর্ষের ফলে উৎপন্ন।










04 মহাবিশ্ব পর্ব ০৬: বুধঃ সূর্যের সবচেয়ে আপন গ্রহ
“ক্যালরি বেসিন”










05 মহাবিশ্ব পর্ব ০৬: বুধঃ সূর্যের সবচেয়ে আপন গ্রহ
বুধের পাশ দিয়ে উড়ে যাবার সময় মেসেন্জারের তোলা ছবি।



বায়ুমন্ডল ও তাপমাত্রাঃ

বুধ একটি শুষ্ক, বাতাসহীন, অত্যাধিক গরম গ্রহ। এর চারপাশে পাতলা স্তরের “বায়ুমন্ডল” বিদ্যমান। এই “বায়ুমন্ডল” সামান্য হিলিয়াম, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন এবং সোডিয়ামের মুক্ত পরমানুর সমন্বয়ে গঠিত যা সৌর বায়ু (solar wind) সাথে বুধের ভু-পৃষ্ঠের সংঘর্ষের ফলে উৎপন্ন হয়। কিন্তু এই মুক্ত পরমানু বুধের অত্যাধিক তাপে উত্তপ্ত হয়ে অল্প সময়েই মহাকাশে হারিয়ে যায় এবং পরক্ষনেই সৌর বায়ুর সঙ্গে ভু-পৃষ্ঠের সংঘর্ষের কারনে আবার মুক্ত পরমানু তৈরী হয়।

দিনের বেলা সুর্যের তাপমাত্রা ৪৫০ ডিগ্রি সে. পর্যন্ত হতে পারে। কিন্তু রাতের বেলা তা কমে মাইনাস ১৭০ ডিগ্রি সে. পর্যন্ত নামতে পারে! এর প্রধান কারন হল এখানে কোন বায়ুমন্ডল নেই।










06 মহাবিশ্ব পর্ব ০৬: বুধঃ সূর্যের সবচেয়ে আপন গ্রহ
ছবিই বলে দিচ্ছে, সময়ের আবর্তে কত গ্রহাণু আর ধুমকেতু আঘাত হেনেছে বুধের বুকে

বুধে পানির অস্তিত্ব?

বুধের তাপমাত্রা অত্যাধিক হওয়ায় সেখানে পানি/ বরফের অস্তিত্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু রাডার অবজারভেশনে বুধের উত্তর মেরুতে জমাট বাঁধা বরফের ছায়া দেখা যায়। বিজ্ঞানীরা বলেছেন বুধের অক্ষ এর কক্ষপথের সাথে প্রায় সমকোন থাকায় উত্তর মেরুতে সুর্য সর্বদা দিগন্তের মাঝামঝি থাকে এবং এখানকার জ্বালামুখ গুলো এত উঁচু (প্রায় ৪-৫ কিলোমিটার) যে এর অভ্যন্তরে কখনোই সুর্যের আলো পৌঁছায় না। এবং এ কারনে উত্তর মেরুর জ্বালামুখের অভ্যন্তরে তাপমাত্রা মাইনাস ১৬১ ডিগ্রি সে. বা এর কম হতে পারে। এখানে জমাট বাঁধা কিছু বরফ থাকতেও পারে।



                                                                  পূর্বে প্রকাশিত এখানে



0 Responses

Post a Comment

Share

Widgets